জরুরিভিত্তিতে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম নিষিদ্ধ করার চার দফা দাবিতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ছানোয়ার হোসেন তালুকদার বিবৃতি দিয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে শোক প্রকাশ করে শনিবার দেয়া এই বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আগে বন্ধ করলে আজ মেজর সিনহাকে অকালে প্রাণ দিতে হত না।
ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি হবে না এ ঘোষণা সরকারকেই দিতে হবে। মেজর সিনহার হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে যে নির্মমতা প্রকাশ পেয়েছে তা এখনই প্রতিরোধ করতে না পারলে ভবিষ্যতে তা ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনতে পারে।’
‘জীবনের সুরক্ষা দেওয়া রাষ্ট্রের মৌলিক কর্তব্য। রাষ্ট্র বিদ্যমান থাকা অবস্থায় নাগরিকের জীবন রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্ত্রধারীর হাতে জিম্মি করে দেওয়া কোনোক্রমেই রাষ্ট্রের করণীয় হতে পারে না।
সরকারের নির্দেশনার বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার এখতিয়ার নেই। সুতরাং কোনো হত্যাকাণ্ড যখন আর ধামাচাপা দেওয়ার সুযোগ থাকে না তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকে না কাউকে ব্যক্তিগতভাবে দোষী করে বা অভিযুক্ত করে বা শাস্তি দিয়েই সরকার নিজের পাপ থেকে মুক্তি পেতে চায়, যা আইনগত ও নৈতিকতা পরিপন্থী।’
‘যে সরকারি কর্মচারী সরকারি ইউনিফর্ম পরে সরকারি অস্ত্র ব্যবহার করে বেআইনি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবেন, তাকে যেমন অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে তেমনি সরকারকেও তার দায় বহন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ব্যক্তিবিশেষকে শাস্তি দিয়ে নাগরিকের জীবন সুরক্ষার মৌলিক কর্তব্য থেকে রাষ্ট্র বিমুক্ত হতে পারে না।’
‘বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছে প্রায় দেড় দশক ধরে। সরকারের অঘোষিত এ ধরনের নীতির কারণে বিচারবহির্ভূত হত্যার প্রশ্নটিই এক নম্বরে এজেন্ডা হয়ে উঠে এসেছে। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একজন সম্ভাবনাময় স্বপ্নচারী তরুণ মেজর সিনহাকে গুলি করে হত্যার মধ্য দিয়ে এ বিতর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে’,- বলা হয় বিবৃতিতে।
এতে আরও বলা হয়, ‘মেজর সিনহার হত্যাকারীদের গ্রেফতার করায় কথিত ক্রসফায়ারের যেসব ভাষ্য পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে দেয়া হতো তা চূড়ান্ত সত্য নয়, তা প্রমাণিত হয়েছে। অতীতে যদি একটি ঘটনার জন্যও দ্রুততার সঙ্গে সত্য উদঘাটনের ব্যবস্থা নেয়া হত তাহলে হয়ত মেজর সিনহাসহ অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু এড়ানো যেত। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড প্রজাতন্ত্রের দার্শনিক ভিত্তিকেই বিনষ্ট করে ফেলছে।’
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে দলটি কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে। তা হলো-
(১) বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম নিষিদ্ধ করা।
(২), এ যাবৎ সংঘটিত সব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের ব্যবস্থা করা এবং সুষ্ঠু, স্বচ্ছ বিচারের আওতায় এনে অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা।
(৩) উপনিবেশিক পুলিশি আইন ও ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে স্বাধীন দেশের উপযোগী করার লক্ষ্যে ‘পুলিশ সংস্কার কমিশন’ গঠন করা।
(৪) রাষ্ট্রীয় সব অস্ত্রধারী প্রতিষ্ঠানকে সাংবিধানিক শৃঙ্খলায় রাখা এবং রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে সাংবিধানিক শাসনের আনুগত্য নিশ্চিত করা।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিষিদ্ধ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সংবিধানিক শৃঙ্খলায় আনতে পারলেই নাগরিকের জীবন সুরক্ষায় রাষ্ট্রের মৌলিক কর্তব্য সম্পাদিত হবে। সরকারকে অবিলম্বে চার দফা বাস্তবায়ন করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করার উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’